সারোয়ার হোসেন,নিজস্ব প্রতিবেদক: উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একজন সাসান্য ফার্মাসিস্ট হয়েও খুলে বসেছেন চেম্বার, বুঝে নাবুঝে দিচ্ছেন প্রেসক্রিপশান করছেন শিশু চিকিৎসা। এমন দৃশ্য রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার হাটগাঙ্গোপাড়া বাজারে। ঐ ডাক্তারের নাম অনুপ কুমার। তিনি বাগমারা উপজেলার নরদাস ইউনিয়নের মাধনগর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট হিসেবে কর্মরত আছেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে শিশুসহ অবিভাবকরা ছুটে আসছেন এই অনুপ ডাক্তারের কাছে। খাতায় নাম লিপিবদ্ধ করালেই দিতে হচ্ছে ৫০ টাকা। এই কাজের জন্য শ্রী নিতাই কুমার নামের আলাদা বিশ্বস্ত লোক রেখেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, বাইরে থেকে কেউ যেন বিরক্ত করতে না পারে সেজন্যও আলাদা লোক রাখা হয়েছে। আরও দেখা যায়, সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা ভুক্তভোগীদের ৫০ টাকা ভিজিটের বিনিময়ে দিচ্ছেন শিশুসহ প্রায় সকল রোগের চিকিৎসা। ডাক্তার রুমের সামনে আরেকটি ওয়েটিং রুমে বসে রয়েছে অসংখ্য শিশুসহ অবিভাবকরা। তাদের সাথে কথা বললে জানাযায়, এলাকায় বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক রয়েছে কিন্তু ভিজিট বেশি হওয়ার কারনে এই অনুপ ডাক্তারের কাছে এসেছেন। এই ডাক্তারের কি সার্টিফিকেট আছে আর কি পাশ আমরা জানিনা। আমরা এখানে বাধ্য হয়ে এসেছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ব্যক্তি বলেন, কিছু দিন আগে আমার বাচ্চাকে নিয়ে এসেছিলাম, সে প্রথম দিনেই আমার বাচ্চাকে এন্টিবায়োটিক ঔষধ দিয়েছিলেন। ঔষধ খাওয়ার পর আমার বাচ্চা দুর্বল হয়ে পড়েছিল। অনেক কষ্টে সেই ধকল কেটে উঠেছে আমার বাচ্চা। এমন অসংখ্য ভুক্তভোগী রয়েছে, যারা এই অনুপ ডাক্তারের অপচিকিৎসার শিকার হয়েছেন। চিকিৎসকের যোগ্যতার বিষয়ে জানতে সরেজমিনে গিয়েও অনুপ ডাক্তারের সাক্ষাৎ মেলেনি। তার কম্পাউন্ডার ( সহযোগি) জানান, স্যার ব্যাস্ত, আপনি বাইরে অপেক্ষা করেন। পরে অনুপ কুমারের মুঠোফোনে বার বার ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এব্যাপারে সিভিল সার্জনকে হুয়াটস এ্যাপের মাধ্যমে অবগত করলে, তিনি উল্টো প্রতিবেদককে বলেন, আইনগত ব্যবস্থা নিন। এমন দ্বায়িত্বশীল জায়গা থেকে দ্বায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। কারন এই ধরনের অপচিকিৎসা রোধ ও ভুয়া ডাক্তারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া তার কর্তব্য।
এরপর বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ, এফ, এম, আবু সুফিয়ান এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, প্রথমত একজন ফার্মাসিস্ট হয়ে সে কোন ধরনের প্রেসক্রিপশন করতে পারবেনা, তার উপর শিশু চিকিৎসা! এটি সে কোনভাবেই পারেন না। আবার বলছেন সে সরকারি চাকরি করছে। যদি এরকম হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে সারাদেশে ভুয়া ডাক্তার বা চিকিৎসকের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় জনস্বার্থে রিট দায়ের করেছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী জে আর খাঁন রবিন। ঐ রিট আবেদনে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন-২০১০ এর ধারা ২৮(৩) ও ২৯(২) সংশোধন করে ভুয়া ডাক্তারের সাজা ৩ বছর ও জরিমানা এক লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা মৃত্যুদণ্ডসহ জরিমানা বাড়াতে বিবাদীদের ব্যর্থতাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, এ মর্মে রুল জারির আর্জি জানিয়েছেন।
Leave a Reply